বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৪ অপরাহ্ন
এম আই ফারুক শাহজী, কালের খবর, ঢাকা :
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার সড়কে চলছে শত শত ঝুঁকিপূর্ণ লেগুনা। অদক্ষ, কিশোর চালক ও হেলপার দিয়ে চালানো হচ্ছে এসব যানবাহন।
প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। সমপ্রতি দ্রুতগতির লেগুনা থেকে পড়ে নিহত হন ইডেন কলেজের এক ছাত্রী। প্রায় আহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। যাত্রী ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, এসব যানবাহনের অধিকাংশ চালকই মাদকাসক্ত। চালকরা সড়কে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালায়। ট্রাফিক আইন ও সড়কে চলাচলের নিয়ম সম্পর্কে তারা একেবারেই অজ্ঞ। পুলিশ ও স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাদের মদদে চলে এসব অবৈধ পরিবহন। লাখ লাখ টাকা চাঁদা দিয়ে চালানো হচ্ছে লেগুনা। এ কারণে দুর্ঘটনার পরেও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকে চালক-মালিকরা।
তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে যাত্রীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডেমরা-যাত্রাবাড়ী সড়কসহ এখানকার অভ্যন্তরীণ রুটে সড়কে চলে সোয়া দুই শ বৈধ-অবৈধ লেগুনা। নানা অব্যবস্থাপনার মধ্যেই এসব যানবাহন সড়কে চলাচল করে। এ ছাড়া ডেমরার অভ্যন্তরীণ সড়কে অবৈধ ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, অটোরিকশা, স্কুটারসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব যানবাহন চলে। আর সড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচলে পরিবহন সেক্টরের দৌরাত্ম্য ও চাঁদাবাজির বিষয়টি এখন ওপেনসিক্রেট। প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় এসব যানবাহন চালাচ্ছে অদক্ষ ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালকরা। আর তাদের বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে সড়কে হরহামেশাই ঘটছে দুর্ঘটনা।
গত ৩০ এপ্রিল শনির আখড়ায় লেগুনা থেকে ছিটকে সড়কে পড়ে নুসরাত জাহান ঝুমা (২০) নামের এক কলেজছাত্রী নিহত হন। তিনি ইডেন কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি কদমতলীর দনিয়া এলাকায় ৮২৯/৮ নূরপুরে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। ঝুমার বড় বোন জেবুন্নেসা জানান, ‘ইডেন থেকে বের হয়ে লেগুনায় করে বাসার দিকে যাচ্ছিলেন ঝুমা। পথে শনির আখড়ার কাছে লেগুনাটি প্রচণ্ড গতিতে স্পিড ব্রেকারে উঠে পড়ে। ওই সময় ঝুমা নামার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ঝাঁকুনির কারণে তিনি লেগুনা থেকে ছিটকে সড়কে পড়ে গেলে মাথায় গুরুতর আঘাত পান এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। ঝুমা পড়ে গেলে লেগুনাটি চলে যায়। ’ তিনি আরো বলেন, ‘বেপরোয়া লেগুনার কারণেই আমার বোন মারা গেছে। এরা কোনো নিয়ম মানে না, বেপরোয়া চলে।
গত ৪ মে যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল মৃধাবাড়ি এলাকায় রাস্তায় থেমে থাকা একটি ক্যানের (গাড়ি বহনকারী) সঙ্গে একটি লেগুনার ধাক্কায় লেগুনায় থাকা ১৩ যাত্রী আহত হন। গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন ইব্রাহিম বলেন, ‘এমন গতিতে চালানো হয়, যে চালক ধরে রাখতে পারেনি। কে চালক আর কে হেলপার, তা বোঝা যায় না। ’
গত বছরে ১৪ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক পেট্রলপাম্পের সামনে একটি যাত্রীবাহী বাসকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় একটি লেগুনা। এতে ১২ জন দিনমজুর আহত হন। রাহাত মাহমুদ নামে ডেমরার নামাপাড়ার এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমি যাত্রবাড়ীতে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। কাজে আসা-যাওয়ার সময় লেগুনায় ওঠে সব সময় ভয়ে থাকি। বাচ্চারা চালায়। এমনভাবে চালায় যে মনে হয় যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ’
স্টাফ কোর্য়ার্টার এলাকার বাসিন্দা রুবেল হোসেন বলেন, ‘দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রশাসন এগুলো বন্ধ করে না। অন্য বাসও সহজে পাওয়া যায় না যে আমরা সেগুলোতে চড়ব। ’ তানিয়া রহমান নামে এক নারী জানান, তিনি বাধ্য হয়ে লেগুনায় ওঠেন। কারণ বাসে মাঝপথ থেকে ওঠা যায় না। তবে লেগুনায় ভয়ে থাকতে হয়।
স্থানীয়রা বলছেন, সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে এসব চালক ও পরিবহন শ্রমিকের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যে ট্রাফিক পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিলেও দায়ীদের বাঁচাতে একাট্টা হয়ে যায় পরিবহন সিন্ডিকেট। এমনকি অবৈধ গাড়ি ও ভুয়া চালকের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের অভিযানও চালানো হয়। কিন্তু এতেও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না তাদের। এখানকার সর্বস্তরে পরিবহন সেক্টরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট।
সরেজমিন দেখা গেছে, ডেমরা থেকে যাত্রাবাড়ীগামী লেগুনার অপ্রাপ্ত বয়সের চালকরা তাদের সিটে বসে কেউ সিগারেট হাতে নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে, কেউ মোবাইল ফোনে কথা বলছে, কেউ বা আবার কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে গান শুনে গাড়ি চালাচ্ছে।
জানতে চাইলে থানার ওসি আজিজুর রহমান বলেন, বিষয়টি মূলত ট্রাফিক বিভাগের। তবে সিন্ডিকেটের প্রভাবে অদক্ষ চালক দিয়ে ডেমরা-যাত্রাবাড়ী সড়কে ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন চলাচলের বিয়টি আমরা প্রয়োজনে দেখব। তিনি আরো বলেন, ঝুমার মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছে। তবে সেই লেগুনার চালক ও হেলপারকে শনাক্ত করা যায়নি।
দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন ।